ব্যবস্থাপনার কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনে লাগে এমন বস্তু বা সম্পদকেই ব্যবস্থাপনার উপকরণ বলে । ব্যবস্থাপনা হলো উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কৌশল বা প্রক্রিয়া । যার সাথে পরিকল্পনা সংগঠনসহ অন্যান্য কাজ সম্পৃক্ত । এরূপ উপকরণের মধ্যে মানবীয় ও বস্তুগত বিভিন্ন উপকরণ অন্তর্ভুক্ত। Terry ও Franklin তাকে 6'M' নামে সংক্ষেপে প্রকাশ করেছেন । নিম্নে এরূপ উপকরণসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. মানুষ (Men): মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব। স্রষ্টা সৃষ্টির সকল বস্তুগত উপকরণকে মানুষের জন্য কল্যাণকর করে সৃষ্টি করেছেন। যা মানুষ উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যবহার করে। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত এই মানব সম্পদকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে বা তাদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থাপক চেষ্টা চালায় । মানব সম্পদের কার্যকর ব্যবহার সম্ভব হলে আপনা-আপনি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত অন্যান্য বস্তুগত উপকরণের কার্যকর ব্যবহার সম্ভব হয় ।
২. মালামাল (Materials): মালামাল বলতে উৎপাদন বা বিক্রয় কার্যে অথবা প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহার্য কাঁচামাল বা প্রস্তুত পণ্যকে বুঝায় । যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন বা তা সংগ্রহ করে বাজারজাত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে । সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা বিক্রয় করলেও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নানান ধরনের মালামাল বা সম্পদ সংগ্রহ ও ব্যবহার করে । এরূপ মালামাল মানসম্মত না হলে মানবীয় প্রচেষ্টা ফলপ্রদ করা সম্ভব হয় না।
৩. যন্ত্রপাতি (Machines): প্রয়োজনীয় দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের হাতিয়ারকে যন্ত্রপাতি বলে । ব্যবস্থাপনার মৌল উপকরণের মধ্যে যন্ত্রপাতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । উৎপাদনধর্মী প্রতিষ্ঠানসমূহে উপযুক্ত মানের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা না গেলে তা থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের পণ্য বা সেবা উৎপাদন সম্ভব হয় না । এ জন্য বর্তমানকালে প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন উন্নতমানের যন্ত্রপাতি সংগ্রহের চেষ্টা চালায় ।
৪. অর্থ (Money): অর্থ বলতে ধন, সম্পত্তি বা বিত্তকে বুঝায় । অর্থনীতির ভাষায় বিনিময়ের মাধ্যমকে অর্থ বলে । সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইস্যুকৃত বিহিত মুদ্রাকে অর্থ বলা হয়। যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যবস্থাপনার অন্যতম উপাদান হলো এই অর্থ । অর্থ বা পুঁজি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই কার্যত গঠন ও পরিচালনা করা যায় না । প্রয়োজনীয় অর্থ যথাসময়ে সংগ্রহ, অর্থের কার্যকর ব্যবহার, এর যথাযথ পরিচালনা- এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয় ।
৫. বাজার (Market): বাজার হলো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা এলাকায় কোনো পণ্য বা সেবার বিদ্যমান ও সম্ভাব্য চাহিদার সমষ্টি । যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বর্তমানকালে এই বাজার বা চাহিদা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে গণ্য। ব্যবসায় গঠনে একজন দক্ষ উদ্যোক্তা সহজেই পুঁজি এবং স্বয়ংক্রিয় ও উন্নত যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে বাজার সৃষ্টি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। বাজার না থাকলে বা বাজার সৃষ্টি করা না গেলে কোনো ব্যবসায়ই সফলতা লাভ করতে পারে না । সৃষ্ট বাজার ধরে রাখাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ।
৬. পদ্ধতি (Method): কার্য সম্পাদনের জন্য গৃহীত কার্যক্রমকে পদ্ধতি বলে । কার্যক্ষেত্রে ব্যবহৃত পদ্ধতিও ব্যবস্থাপনার অন্যতম উপকরণ। যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘদিনের কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে প্রতিটা কাজের সুবিধাজনক উপায় বা পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটে । কার্যকর পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়, সময়ের সাশ্রয় ঘটে এবং দ্রুত কার্য সম্পাদন সম্ভব হয় । একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভালো চলার পিছনে উত্তম পরীক্ষা ও ক্লাস অনুষ্ঠান পদ্ধতির অবদান আমরা সহজেই লক্ষ করতে পারি ।
Read more